কিরিবুরু ও মেঘহাতুবুরু: মেঘ আর পাহাড়ের রোমাঞ্চকর হাতছানি!

ঝাড়খণ্ড আর ওড়িশার সীমান্তে লুকিয়ে আছে দুটি অসাধারণ পাহাড়ি রত্ন – কিরিবুরু আর মেঘহাতুবুরু। যারা প্রকৃতির নীরব শোভা ভালোবাসেন, যারা অ্যাডভেঞ্চারের রোমাঞ্চে শিহরিত হতে চান, তাদের জন্য এই দুটি স্থান এক কথায় স্বর্গোদ্যান। ঘন সবুজ সারান্দা বনের বুক চিরে মেঘ ছুঁয়ে থাকা পাহাড়চূড়া, লৌহ আকরিকের খনির এক ভিন্ন জগৎ – সব মিলিয়ে কিরিবুরু ও মেঘহাতুবুরু যেন প্রকৃতির এক বিস্ময়কর সৃষ্টি।

কোথায় এদের ঠিকানা?

কিরিবুরু, যা ওড়িশার কেন্দুঝার জেলার একটি শান্ত শহর, আর মেঘহাতুবুরু, ঝাড়খণ্ডের পশ্চিম সিংভূম জেলার কোলে কিরিবুরুর ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে। মজার ব্যাপার হল, এই দুটি স্থানের দেখভাল করে SAIL-এর লৌহ আকরিক খনি (KIOM ও MIOM)।

কেন এদের খ্যাতি জগৎজোড়া?

কিরিবুরু নামের মধ্যেই লুকিয়ে আছে তার পরিচয় – “হাতির পাহাড়”। সত্যিই এখানে মাঝে মাঝেই বন্য হাতির দেখা মেলে। আর মেঘহাতুবুরু? সে তো মেঘের পাহাড়! সারা বছরই মেঘের চাদরে মোড়া থাকে এখানকার আকাশ। তাই তো একে আদর করে ডাকা হয় “ওড়িশার চেরাপুঞ্জি”। আর হ্যাঁ, সারান্দা বনের কথা তো বলতেই হয়। এশিয়ার অন্যতম ঘন শাল গাছের এই বন বন্যপ্রাণী আর জঙ্গল ট্রেকিংয়ের জন্য এক অসাধারণ ঠিকানা।

কী দেখবেন এখানে?

  • প্যানোরামিক ভিউ: কিরিবুরুর বিভিন্ন viewpoint থেকে সবুজ উপত্যকার যে মনোরম দৃশ্য চোখে পড়বে, তা যেন শিল্পীর আঁকা ছবি।
  • সূর্যাস্ত: মেঘহাতুবুরুর সন্ধ্যায় আকাশের রঙ বদলের খেলা দেখলে আপনি মুগ্ধ হয়ে যাবেন। দিগন্ত জুড়ে রঙের যে মেলা বসে, তা ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন।
  • ঝর্ণা: প্রকৃতির শীতল স্পর্শ পেতে ঘুরে আসুন পুন্ডুল জলপ্রপাত, খন্ডধর জলপ্রপাত আর সানাঘাঘড়া জলপ্রপাত থেকে। এদের কলকল ধ্বনি আর চারপাশের সবুজ আপনাকে শান্তি এনে দেবে।
  • মন্দির: আধ্যাত্মিক শান্তি খুঁজে পেতে ঢুঁ মারতে পারেন স্বপ্নেশ্বর মন্দির ও জিন্দাল শিব মন্দিরে।
  • সারান্দা জঙ্গল: কিরিবুরু থেকে মাত্র ৫৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই ঘন শাল বন বন্যপ্রাণী দেখার এবং রোমাঞ্চকর ট্রেকিংয়ের জন্য আদর্শ।

কোথায় হবে আপনার রাত্রিবাস?

কিরিবুরু থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে বারবিলে আপনি বাজেট-বান্ধব অনেক হোটেল ও গেস্টহাউস খুঁজে পাবেন। আর মেঘহাতুবুরুতে থাকতে চাইলে স্থানীয় গেস্টহাউস অথবা SAIL-এর অতিথিশালা আপনার জন্য সেরা বিকল্প হতে পারে।

কীভাবে পৌঁছবেন এখানে?

  • বিমানপথে: রাঁচি বিমানবন্দর (IXR, ১৪২ কিমি) অথবা ভুবনেশ্বর বিমানবন্দর (BBI, ২১২ কিমি) থেকে ট্যাক্সি ভাড়া করে আপনি সহজেই কিরিবুরু পৌঁছাতে পারেন।
  • ট্রেনপথে: নিকটতম রেলওয়ে স্টেশন হল বড় জামদা (BJD)। হাওড়া থেকে জনশতাব্দী এক্সপ্রেসে করে এখানে আসা যায়।
  • সড়কপথে: ঝাড়খণ্ড ও ওড়িশার প্রধান শহরগুলি থেকে বাস বা প্রাইভেট ক্যাব সবসময় উপলব্ধ।

কিছু দরকারি টিপস:

  • মেঘহাতুবুরুর মেঘে ঢাকা দৃশ্য উপভোগ করার সেরা সময় হল বর্ষাকাল (জুন থেকে সেপ্টেম্বর)। আর যারা ট্রেকিং ভালোবাসেন, তাদের জন্য শীতকাল (অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি) আদর্শ।
  • ঘন জঙ্গল আর বন্য হাতির আনাগোনার কারণে সবসময় একজন অভিজ্ঞ গাইড সাথে রাখুন।

প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য আর শান্ত পরিবেশের সন্ধানে যদি আপনার মন ব্যাকুল হয়, তাহলে কিরিবুরু আর মেঘহাতুবুরু আপনার জন্য এক অসাধারণ গন্তব্য হতে পারে। মেঘ আর পাহাড়ের এই রোমাঞ্চকর হাতছানি উপেক্ষা করা কঠিন!

কেমন লাগলো এই ব্লগটি? আপনার যদি আরও কিছু জানার থাকে, তাহলে অবশ্যই আমাদেরকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন।