আসামের একমাত্র শৈলশহর হাফলং। সমুদ্র থেকে প্রায় ২২৩০ফুট উচ্চতায় অবস্থিত “ডিমা হাসাও” জেলার সদর হাফলং। স্থানীয় ভাষায় হাঁফলাঁও-এর অর্থ সাদা উইয়ের ঢিপি। এই হাঁফলাঁও থেকে হাফলং।
হাফলং এর মূল আকর্ষণ এর প্রাকৃতিক সৌন্দর্য। পাইন, নীল অর্কিড, আরো নানান গাছে শোভিত এই শৈলশহর। আর হাফলং লেক এই শহরের সৌন্দর্য আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এখান থেকে সূর্যোদয়, এক অতি মনোরম দৃশ্য। পূর্বহিমালয়ের ছোট্ট এই শৈলশহর আসাম ভ্রমণকারীদের অবশ্যই একবার দেখা উচিত। সারা বছরই এখানকার আবহাওয়া মনোরম থাকে তবে সবচেয়ে ভালো সময় এপ্রিল থেকে জুন, এই সময় আকাশ পরিষ্কার থাকে কিন্তু গরম থাকেনা। আর এখানকার শীতও উপভোগ্য।
বরাইল পর্বতমালায় অবস্থিত হাফলং প্রকৃতিকে উপভোগ করার আদর্শস্থান। পাহাড়ের গা বেয়ে নেমে আসা ঝর্ণা, পার্বত্য নদীর দুরন্ত বেগে ছুটে যাওয়া, বা পাহাড়ের মধ্য দিয়ে হাঁটা, সাথে নানা রঙের অর্কিড, নানা পাখীদের কলকাকলিতে মুগ্ধ হওয়া – এক কথায় প্রকৃতিকে উপভোগ করাই হাফলং ভ্রমণকারীদের আকর্ষিত করে।
কী দেখবেন:-
১) হাফলং লেক, শহরের একদম কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত। লেকের জলে বোটিং করতে পারেন।
২) এছাড়াও দেখবেন প্রাচীন সার্কিট হাউস, হাফলঙ চার্চ, ঝুলন্ত ব্রিজ, প্রাচীন কালীবাড়ি ও অর্কিড গার্ডেন।
৩) পরিযায়ী পাখিদের স্বর্গরাজ্য হাফলঙ। এখানকার জলাশয়ে রয়েছে হাজার হাজার পাখির বাস।
৪) বরাইল অভয়ারণ্য – হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, ক্লাউডেড লেপার্ড–সহ বিভিন্ন প্রাণীর দেখা পাওয়া যায় বরাইল অভয়ারণ্যে। এছাড়াও রয়েছে নানান ধরনের পাখিদের আস্তানা।
৫) ট্রেকিং – যারা ট্রেকিং ভালবাসেন তাদের আদর্শ স্থান হাফলং। ট্রেক করে যেতে পারেন ১৮ কিমি দূরের বেনদাও বাগলাই ওয়াটারফলসে অথবা ঘুরে আসতে পারেন ৭ কিমি দূরের এন লাইকুল গ্রামে। প্রকৃতির অপরূপ শোভা ট্রেকিংএর কষ্ট লাঘব করে দেবে।
৬) অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টস – এখানে প্যারাগ্লাইডিংসহ অন্যান্য অ্যাডভেঞ্চার স্পোর্টসের ব্যবস্থা আছে।
৭) কেনাকেটা – বাঁশের নানা শিল্পকর্মের জন্য বিখ্যাত অসম। আর সে সব শিল্পকর্মের সম্ভার পাবেন এখানে।
একটু দূরে, ঘুরে আসতে পারেন
৮) জাতিঙ্গা – পরিযায়ী পাখির মেলা বসে। সেপ্টেম্বর–অক্টোবর মাসের কৃষ্ণপক্ষের রাতে পাখিদের আত্মহত্যার জন্য বিখ্যাত এই স্থান।
৯) মাইবঙ – হাফলং থেকে একটু দূরে পাহাড়, ঝর্ণা আর নানা ঐতিহাসিক স্থাপত্য নিয়ে রয়েছে মাইবঙ। ১৫৩৬ খ্রিস্টাব্দ থেকে কাচরি শাসকদের রাজধানী ছিল এই মাইবঙ। দিমাশা রাজ্যের রাজধানী ছিল। প্রাচীন নানা স্মৃতিচিহ্ন রয়েছে এই মাইবঙে। এছাড়াও রয়েছে বহু প্রাচীন জলাশয় ও মন্দির। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য দুই ছাদ বিশিষ্ট এক পাথরে গড়া রামচণ্ডী মন্দির।
১০) পানিমুর ঝর্ণা – এখানকার সবচেয়ে প্রসিদ্ধ ঝর্ণা।
কী ভাবে যাবেন:-
ট্রেন – কলকাতা থেকে সরাসরি ট্রেন কাঞ্চনজঙ্ঘা এক্সপ্রেস। এই ট্রেন প্রতিদিন শিয়ালদা থেকে সকাল ৬.৩৫ মিনিটে ছেড়ে নিউ হাফলং পৌঁছোয় সকাল ১০.১৫ মিনিটে। এছাড়াও কলকাতা থেকে নিউ হাফলং যাওয়ার জন্য রয়েছে আরো অনেকগুলো ট্রেন। দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে গুয়াহাটি এসে, সেখান থেকেও ট্রেনে নিউ হাফলং যাওয়া যায়।
বিমান – গুয়াহাটি বিমানবন্দর। গুয়াহাটি থেকে বাসে বা গাড়িতে দূরত্ব প্রায় ৩৪৯ কিমি।অথবা শিলচর বিমানবন্দর থেকেও গাড়িতে যাওয়া যায় হাফলং, সেক্ষেত্রে দূরত্ব ১০৬ কিমি।টিকিট সংক্রান্ত তথ্যের জন্য যোগাযোগ করতে পারেন – Misti Mithai Tours & Travels – 97488 81868।
কোথায় থাকবেন:-
ল্যান্ডমার্ক, ইষ্টার্ণ, কল্পতরু, নক্ষত্র, ইত্যাদি, নানা মানের ও দামের বেসরকারি হোটেল ও লজ রয়েছে। সন্ধান নিতে পারেন Bleu Glacio Trip – 98745 81868 থেকে।
ছবিঃ- ইন্টারনেট থেকে স্ংগৃহীত।