সপ্তাহান্তের দুদিন ঘুরে আসুন “মিনি লন্ডন” থেকে।

আমাদের পাশের রাজ্যের অনেক পর্যটনকেন্দ্রই এখনও স্বল্পপরিচিত হয়েই রয়ে গেছে। ঝাড়খণ্ডে রয়েছে অসংখ্য বেড়ানোর জায়গা। আর এই ঝাড়খণ্ডেই রয়েছে ভারতের “মিনি লন্ডন”। অনেকেই রাঁচি, হাজারিবাগ, নেতারহাট গেছেন। এছাড়াও আরো অনেক সু্ন্দর জায়গা রয়েছে ঝড়খণ্ডে। যেমন রয়েছে ম্যাকলুক্সিগঞ্জ, অনেকেই যাননি সেখানে। ছোটনাগপুর পাহাড়ের কোলে রয়েছে ভারতের “মিনি লন্ডন” – ম্যাকলুস্কিগঞ্জ। সবুজ পাহাড়, ঝরনা, জঙ্গলে ঘেরা এখানকার প্রকৃতি আপনাকে মুগ্ধ করবেই। বাঙালিরা অনেকেই তরুণ মজুমদারের জনপ্রিয় ছবি দাদার কীর্তি দেখেছেন, এই সিনেমার শ্যুটিং হয়েছিল ম্যাকলুস্কিগঞ্জে।


একসময় বাঙালিদের কাছে পশ্চিমের জায়গা বলে ম্যাকলুস্কিগঞ্জ জনপ্রিয় ছিল। কিন্তু শেষ কয়েকদশকে পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে এখানকার জনপ্রিয়তা হ্রাস পেয়েছে। তবুও এখানকার প্রকৃতি আর পরিবেশ অতি সুন্দর, তা আলাদা করে বলার নয়।

ঝাড়খণ্ডের সবচেয়ে সুন্দর জায়গাগুলোর মধ্যে অন্যতম ম্যাকলুক্সিগঞ্জ। মনোরম আবহাওয়া এবং ব্রিটিশ আমলে তৈরি নাগরিক স্থাপত্যও পরিবেশ মুগ্ধ করবে।


ঝাড়খণ্ডের এই স্থানটির বিদেশি নাম কেন হল, জানেন? তার একটা ছোট ইতিহাস রয়েছে। ছোটনাগপুর মালভূমি মূলত খনিজ পদার্থের জন্যই পরিচিত। ব্রিটিশরা যখন এই বিপুল খনিজের সন্ধান পায় তখন তাঁরা সেই খনিজ সম্পদ রপ্তানি করার চেষ্টা শুরু করে। সেই উদ্দেশ্যে ছোটনাগপুর মালভূমি থেকে কলকাতা পর্যন্ত রেললাইন তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়। 1932 সালে সেই রেললাইন তৈরির বরাত পেয়েছিলেন কলকাতার একজন ব্যবসায়ী আর্নেস্ট টিমোথি ম্যাকক্লুস্কি। তিনিই প্রথম এই জায়গাটি আবিষ্কার করেন এবং নিজে পাকাপাকি ভাবে বসবাস করতে শুরু করেন। এবং ম্যাকক্লুস্কি সাহেব তৎকালীন ব্রিটিশ সরকারের থেকে ছাড়পত্র নিয়ে 1933 সালে ব্রিটিশ এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানদের জন্য এই শহর গড়ে তোলেন। তাঁর অনুরোধেই অনেক ব্রিটিশ সাহেব এবং অ্যাংলো-ইন্ডিয়ানরা ম্যাকলুক্সিগঞ্জে এসে বসবাস শুরু করেন। একেবারে সাহেবি কায়দায় তিনি শহরটি তৈরি করেন। ওনার নামানুসারেই এই জায়গাটির নাম হয় ম্যাকলুক্সিগঞ্জ। স্বাধীনতার পরে অবশ্য অনেক বাঙালীও এখানে সম্পত্তি কিনে বাস করা শুরু করেন।

ম্যাকলুক্সিগঞ্জের মনোরম পরিবেশ পর্যটকদের মুগ্ধ করতে বাধ্য। ব্রিটিশ আমলের তৈরি এই কলোনিতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে একাধিক কটেজ, বাংলো, লালমাটির রাস্তা, সবুজ পাহাড়, ঝর্ণা, নদী। সব মিলিয়ে মন ভাল করে দেবে ম্যাকলুক্সিগঞ্জ। ম্যাকলুক্সিগঞ্জে এখনও অনেক বাঙালি বসবাস করেন।


কীভাবে যাবেন

কলকাতা থেকে রাঁচিগামী যেকোনো ট্রেনে রাঁচি স্টেশনে আপনাকে নামতে হবে। সেখান থেকে গাড়িতে যেতে হবে ম্যাকলুক্সিগঞ্জ। রাঁচি থেকে দূরত্ব প্রায় ৬৪ কিলোমিটার। অথবা হাওড়া থেকে শক্তিপুঞ্জ এক্সপ্রেসে যেতে পারেন খালারি ষ্টেশন। সেখান থেকে গাড়ীতে ম্যাকলুক্সিগঞ্জ।

কি দেখবেন

ম্যাকক্লুস্কিগঞ্জে ভ্রমণ মূলত প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ আর বিশ্রাম নেওয়ার জন্যে। এখানকার রাস্তায় হাঁটতে এবং ব্রিটিশ স্থাপত্য দেখতে আপনার ভালো লাগবে। তবে এছাড়াও দেখে নেবেন ডুলি গ্রাম, নাকটা পাহাড়, জাগৃতি বিহারএখানকার হস্তশিল্পের সম্ভার আপনাকে মুগ্ধ করবে, সানরাইজ পয়েন্ট, ডুগাডুগি নদী, সর্ব ধর্মস্থল (ম্যাকলুক্সিগঞ্জ গুরুদ্বার এবং মন্দির একই সাথে আছে, যা ভারতের অখণ্ডতা ভ্রাতৃত্ব জাগ্রত করে, মসজিদ এটি গুরুদুয়ারা এবং মন্দির কমপ্লেক্সের ঠিক পাশে, এবং সেন্ট জন চার্চ), সীতাকুণ্ড, কুয়ারপাত্র ক্যানিয়ন, ইত্যাদি।

কখন যাবেন

সারা বছরই যেতে পারেন, বর্ষায় প্রকৃতি সবুজ হয়ে ওঠে, ভালো লাগবে। তবে সবথেকে ভালো সময় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী, তখন অবশ্য একটু বেশী ভীড় থাকে। ম্যাকলুক্সিগঞ্জ গেলে প্রয়োজনীয় জিনিস এবং ওষুধ নিয়ে যাবেন, কারণ দোকান বাজার একটু দূরে। 


থাকবেন কোথায়, খরচ কেমন 

৪জনের জন্যে, ২রাত্রি ৩দিনের বাজেট, জনপ্রতি মোটামুটি ৩০০০/- টাকা থেকে শুরু।

ঘর ভাড়া দিনপ্রতি ১২০০ থেকে ৩৫০০/- টাকার মধ্যে পেয়ে যাবেন।

এখানে কয়েকটি থাকার জায়গার নাম দিলাম দেখে নিতে পারেন। 

Rana’s Country Cottage

Dream Destination

Gordon Guest House

Gulmohar Guest House

একদিনের দর্শনীয়স্থান ভ্রমণের জন্য গাড়ী ভাড়া আনুমানিক ১২০০১৫০০/- টাকা লাগবে।

আর, নিশ্চিন্তে শুধুই ভ্রমণের আনন্দ উপভোগ করতে চাইলে আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। 

Bleu Glacio Trip

(M) 9874581868 / 03340653050

“Wherever you go, go with all your heart.” – Confucius