উজ্জয়িনী – একটি প্রাচীন শহর।

উজ্জয়িনী, (উজ্জয়েন, অবন্তিকা, অবন্তিকাপুরী) মধ্যপ্রদেশের উজ্জ্বয়ীন জেলার একটি শহর। এটি হিন্দু তীর্থস্থান সপ্তপুরীর মধ্যে অন্যতম। এই প্রাচীন শহরটি পবিত্র শিপ্রা নদীর পূর্বতীরে অবস্থিত।

প্রতি বারো বছর অন্তর এই শহরে কুম্ভ মেলা অনুষ্ঠিত হয়, যেটি  “সিংহস্থ” নামেও পরিচিত। দ্বাপর যুগে শ্রীকৃষ্ণ উজ্জয়িনীতে অবস্থিত “সন্দিপানী” আশ্রমে শিক্ষা গ্রহণ করেছিলেন।


উজ্জয়িনী ৬০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে মধ্য ভারতের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক কেন্দ্র ছিল এবং ষোলটি মহাজনপদের অন্যতম প্রাচীন রাজ্যে “অবন্তীর” রাজধানী ছিল। খ্রিস্টপূর্ব চতুর্থ শতাব্দীতে, মৌর্য সম্রাট চন্দ্রগুপ্ত অবন্তীকে তাঁর সাম্রাজ্যের সাথে যুক্ত করেন। তাঁর নাতি অশোকের মৌর্য সাম্রাজ্যের যে চারটি প্রদেশের উল্লেখ রয়েছে, তার মধ্যে উজ্জয়িনী পশ্চিমপ্রদেশের রাজধানী ছিল। রাজা অশোকের পুত্র (মহেন্দ্র) এবং কন্যার (সংঘমিত্র) জন্মস্থানও এই উজ্জয়িনী।


পঞ্চম শতাব্দীর গুপ্তবংশের রাজা বিক্রমাদিত্যের রাজসভার কবি কালিদাস মহাকাব্য “মেঘদূত” রচনা করেছিলেন এবং সেখানে তিনি উজ্জয়িনীর সমাজ ব্যবস্থা ও জনগণের ঐশ্বর্যের বর্ণনা দিয়েছিলেন। এই শহর অতীতে জৈন, বৌদ্ধ এবং হিন্দু ঐতিহ্যের মধ্যেও বৌদ্ধিক শিক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হিসাবে সুনাম অর্জন করেছিল।

একাদশ শতাব্দীতে  সোমদেবের লেখা “কথাসরিতসাগর”এ উজ্জয়িনীর উল্লেখ রয়েছে। উনি লিখেছিলেন স্বয়ং বিশ্বকর্মা এই শহরটি তৈরি করেছিলেন এবং শহরকে সমৃদ্ধ এবং বিস্ময়কর দর্শনীয় স্থান হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন।


উজ্জয়িনী  মহাকালেশ্বরের শহর হিসাবেও পরিচিত, কারণ মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ এই শহরেই অবস্থিত এবং এটি বারো জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে অন্যতম। যেহেতু মহাকালেশ্বর জ্যোতির্লিঙ্গ  উজ্জয়িনীতে অবস্থিত, তাই এই স্থান বাবা মহাদেবের কাছে উত্সর্গীকৃত। মহাকালেশ্বর মন্দিরটি রুদ্র সাগর হ্রদের তীরে অবস্থান করছে। এই মন্দিরে বাবা মহাদেবকে লিঙ্গ রূপে উপাসনা করা হয়। এখানে শিবকে  স্বয়ম্ভু বলে মনে করা হয়, কারণ  তিনি নিজের শক্তি থেকেই নিজেকে সৃষ্টি করেছেন। উক্ত মন্দিরে অন্যান্য মূর্তি বা লিঙ্গ মন্ত্রশক্তি ও সাধনার দ্বারা প্রতিষ্ঠিত।


এখানে অনেক ঐতিহাসিক এবং প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন রয়েছে। শুধু তীর্থযাত্রী নয়, ইতিহাসপ্রেমীদেরকেও আকর্ষিত করবে এই শহর।


এখানকার দ্রষ্টব্য স্থানগুলি হল – মহাকালেশ্বর মন্দির, কালভৈরব মন্দির, চিন্তামণি গণেশ মন্দির, হরসিদ্ধি মন্দির (শক্তিপীঠ), দ্বারকাদেবের গোপাল মন্দির, মহাঋষি সন্দীপনের আশ্রম, গোমতী কুণ্ড, যন্তর মন্তর, কালিয়াদেহর প্রাসাদ, এবং আরো প্রচুর প্রাচীন মন্দির। অবশ্যই শিপ্রা নদীর তীরে রাম ঘাটে আরতি দেখতে ভুলবেন না।