কলকাতার কাছাকাছি প্রকৃতির কোলে হারিয়ে যেতে চান?

তাহলে ঘুরে আসুন উড়িষ্যার বাংরিপোসি।

বাংরিপোসি ময়ূরভঞ্জের ঠাকুরানী পাহাড়ের পাদদেশে, উপজাতিদের এক নির্জন গ্রাম। সিমলিপাল ফরেস্ট রেঞ্জের উত্তর দিকে বাংরিপোসি অবস্থিত।

আদিবাসীদের এই গ্রাম রয়েছে ঘন সবুজ জঙ্গলের মাঝে, আর আছে পাহাড় ও নদী। এখানে বিদ্যাভান্ডার, পাথরাকুসি এবং বুরাবুরির অপূর্ব সুন্দর পাহাড়ের মাঝে যেন পাখীর বাসা বেঁধেছে। যদিও পাথরাকুসি, বিদ্যাভান্ডার পাহাড় দু’দিক থেকে ঘিরে রেখেছে বাংরিপোসিকে, তবুও এই পাহাড় দুটিই বাংরিপোসিকে আরো সুন্দর করে তুলেছে, সে বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই।


বুদ্ধদেব গুহর লেখা ‘বাংরিপোসির দু’রাত্তির’ বইটি পড়া থাকলে দেখবেন লেখনীর সঙ্গে প্রকৃতি যেন হুবুহু মিলে গিয়েছে বাস্তবতার সাথে। উনি ওনার লেখার ছত্রে ছত্রে ছড়িয়ে দিয়েছেন বাংরিপোসির প্রকৃতি। যা আপনাকে আশ্চর্য করবে।


বন্ধুবান্ধব বা পরিবারের সঙ্গে অথবা শুধুমাত্র মনের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে দু’দিনের জন্য ঘুরে আসতেই পারেন। কথা দিচ্ছি শরীরের ক্লান্তি ভুলে, মন একেবারে চনমনে হয়ে উঠবে। এখানে দুয়ারসিনি মন্দির রয়েছে । মন্দিরের সামনের রাস্তাটি চলে যাচ্ছে কেওনঝাড়, রাস্তাটির দু’পাশের সবুজ বনানী চোখ জুড়িয়ে দেয়। এই রাস্তাটি আরো একটি রোমাঞ্চকর দিক রয়েছে। আপনাকে সতর্ক থাকতে হবে, কারণ যে কোন সময় হাতির দর্শন পেতে পারেন, এটি হাতিদের চলাচলের অন্যতম রাস্তা। এছাড়াও চতুর্দিকে দেখতে পাবেন অসংখ্য বাঁদর ও হনুমান।


ছোটবড় টিলার মাঝে প্রকৃতির সান্নিধ্যে আপনাকে মুগ্ধ করবেই। বয়স্ক মানুষদেরও ভালো লাগবে জায়গাটির নির্জনতা। লাল মাটির পথ ধরে পায়ে হেঁটে ঘুরতে যেতে পারেন ব্রাহ্মণকুণ্ডে। সেখানে আপনাকে অভ্যর্থনা জানাতে দাঁড়িয়ে রয়েছে সারিসারি শাল-মহুয়া। আদিম নির্জনতার মাঝে খানিক প্রাণ ভরে প্রকৃতির আঘ্রাণ নিন। নিজেকে তরতাজা অনুভব করবেন।

যারা প্রকৃতিকে ভালোবাসেন এবং কংক্রিটের জঙ্গলের বাইরে প্রাকৃতিক জায়গায় যেতে পছন্দ করেন, তেমন “অফবিট” ভ্রমণপিপাসুদের কাছে, বাংরিপোসি আদর্শ জায়গা। গ্রীষ্মকাল বাদে যে কোন সময়, মাত্র দু’দিনের জন্য, অল্প খরচে, কলকাতা থেকে বাংরিপোসি মাত্র ২৩০ কিলোমিটার ঘুরে আসাই যায়। বাংরিপোসি বেড়ানোর আদর্শ সময় অক্টোবর থেকে মার্চ। তবে বর্ষাকালে প্রকৃতি নতুন ভাবে সেজে ওঠে। নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারী মাসের সন্ধ্যায় বেশ ঠাণ্ডা পেতে পারেন। তবে আবহাওয়া সারাবছরই বেশ মনোরম।


কি দেখবেন:

বেরেহিপানি এবং জোড়ান্ডা জলপ্রপাত, লুলুং, চাহালা, দুয়ারসিনি মন্দির, বুড়িবলম নদী, ডোকরা গ্রাম, এবং সিমলিপাল টাইগার রিজার্ভ (প্রায় 60 কিলোমিটার)। হাতে সময় থাকলে  কাছে-দূরে মিলিয়ে আরো অনেক ঝর্ণা, মন্দির ও হ্রদ আছে, ঘুরে দেখতে পারেন।


কীভাবে যাবেন:

রেল: প্রথমে হাওড়া থেকে ধৌলি এক্সপ্রেসে বালাসোর। বালাসোর থেকে, সকাল 10.05এর প্যাসেঞ্জার ট্রেন ধরতে পারলে, দুপুরের মধ্যে পৌঁছে যেতে পারেন।

বাস: কলকাতা থেকে বাংরিপোসি যাওয়ার বাস পেতে পারেন। ধর্মতলা থেকে বারিপদা যাওয়ার যে কোনও বাসে যাওয়া যায়, তবে ওঠার আগে জেনে নেবেন।

গাড়ী: আর গাড়ি নিয়ে যেতে হলে “এনএইচ 6” আপনাকে সরাসরি বাংরিপোসিতে পৌঁছে দেবে। প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘন্টা লাগতে পারে।

বাংরিপোসিতে বাজেট অনুযায়ী হোটেল, হোমস্টে, এবং রিসর্ট আছে। এসি, নন এসি দু’ধরনের ঘর পাওয়া যাবে। প্রায় সব জায়গাতেই বাঙালি খাবার পাওয়া যায়, স্বাদও খুব খারাপ নয়।কোথাও আবার নিজের মতন বাজার করে এবং রান্না করার সুব্যবস্থাও রয়েছে। তাহলে সপ্তাহান্তে বা ছোট ছুটিতে বেরিয়ে পড়ুন আদিম প্রকৃতির মাঝে।